আধিভৌতিক, আধিদৈবিক ও আধ্যাত্মিক জ্বালাকে ত্রিতাপ জ্বালা বলে। আধিভৌতিক, আধিদৈবিক এবং আধ্যাত্মিক এই তিন প্রকার দুঃখ বা কষ্টের সমষ্টিকে বোঝায়। এই তিনটি কষ্টের কারণে মানুষ বা জীবাত্মা বিভিন্ন প্রকার যন্ত্রণা ভোগ করে।
আধিভৌতিক দুঃখ:- অন্য জীব বা প্রাকৃতিক শক্তি থেকে সৃষ্ট দুঃখ। যেমন – আঘাত, রোগ, বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
আধিদৈবিক দুঃখ: – প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেমন – বন্যা, ঝর, ভূমিকম্প ইত্যাদি।
আধ্যাত্মিক দুঃখ:- নিজের শরীর ও মন থেকে সৃষ্ট দুঃখ, যেমন – মানসিক অসুস্থতা বা শারীরিক অসুস্থতা।
ত্রিতাপ জ্বালা ভোগ করতে হয় প্রত্যেক জীবাত্মা বা মানুষকে। তার কারণ হল প্রকৃতির গুণের তারতাম্যতার জন্য অর্থাৎ স্বত্ব, রজ ও তম গুণের বিভিন্নতার জন্য মানুষকে এ ত্রিতাপ জ্বালা ভোগ করতে হয়।
এই ত্রিতাপ জ্বালা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আধ্যাত্মিক অনুশীলন, অর্থাৎ যোগ, ধ্যান, বা শ্রী গুরু প্রদত্ত “শ্রী নামের” জপের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক দর্শন/অনুভূতির দ্বারা।
এ ব্যাপারে শ্রী শ্রী রাম ঠাকুরের উপদেশের বেদ বাণীর মর্মার্থ উপলব্ধি করতে হবে যাতে ত্রিতাপ জ্বালা থেকে মুক্তি লাভ করা যায়।
শ্রী শ্রী রাম ঠাকুরের উপদেশ অনুযায়ী নিষ্কাম ভাব নিয়ে যদি আমরা শ্রী গুরু প্রদত্ত “শ্রী নাম” অহরহ অনবরত যে কোনো অবস্থায় সর্বদা ভক্তি, শ্রদ্ধা, নিষ্ঠা ও দৃঢ় প্রত্যয় অন্ধ বিশ্বাস এবং অধ্যাবসায়ের সহিত জপ করি, তবে এ ত্রিতাপ জ্বালা দূর করতে আমরা সক্ষম হবো; কিন্তু এ কাজ অত্যন্ত কঠিন , আবার অসম্ভব কিছু নয়, অর্থাৎ এ জগতের যাবতীয় ঋণ সম্পূর্ণ পরিশোধ করতে হবে। এ সংসারের যাবতীয় কামনা বাসনা ত্যাগ করতে হবে। শ্রী গুরুর শ্রী চরণে সম্পূর্ণ সমর্পণ করতে হবে। এভাবে প্রতি নিয়ত নামের/ভগবানের সেবা করতে করতে ভিতর থেকে কূল কুণ্ডলিনী শক্তির জাগরণ হবে। ধীরে ধীরে ভক্তি গাঢ় হয়ে বিশুদ্ধ ভক্তির জাগরণ হবে, পরে প্রেমের উদয় হবে এবং আরো গভীরে প্রবেশ করলে বিশুদ্ধ প্রেমের উদয় হবে। এ অবস্থায় কোন বাহ্যিক জ্ঞান থাকে না। প্রেমানন্দের রস সাগরে ডুবে কেবল অমৃত রসই আস্বাদন হবে এবং পার্থিব জগতের সকল ত্রিতাপ জ্বালা দূর হয়ে যাবে এবং ভগবানের অর্থাৎ পরমাত্মার সঙ্গে লীন হয়ে যাবে। এ অবস্থায় পৌঁছানো অতি দুর্লভ, শ্রী গুরু কৃপা ব্যতীত ঐ উচ্চ স্তরে প্রবেশ করা অসম্ভব। তাই আসুন আমরা সবাই শ্রী গুরুর প্রতি দৃঢ় প্রত্যয় অন্ধ বিশ্বাস নিয়ে তাঁরই অনুগত হয়ে তাঁর উপদেশ বাণী শিরোধার্য মেনে অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করি। তাতে শ্রী গুরু কৃপা প্রাপ্ত না হলেও অন্ততঃপক্ষে আধ্যাত্মিক এর উচ্চ স্তরে অবশ্যই পৌঁছতে সক্ষম হব এবং ত্রিতাপ জ্বালার অবসান হবে। সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা, সশ্রদ্ধ প্রণাম ও প্রাণের ভালবাসা জানাই। প্রদ্যোৎ কুমার ভৌমিক (চন্দন ভৌমিক), সম্পাদক, শ্রী শ্রী রাম ঠাকুর আশ্রম, হরিদ্বার।